চিঠি, মানুষের আবেগ, চিন্তা ও বার্তা বিনিময়ের এক ঐতিহাসিক ও প্রাচিন মাধ্যম। বর্তমান এই আধুনিক যুগে ইমেইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের ভিড়ে চিঠি লেখার প্রচলন কিছুটা কমে গেলেও এর গুরুত্ব এখনো রয়েছে। একাডেমিক পড়াশোনা হোক বা অফিসিয়াল যোগাযোগ – চিঠি লেখার নিয়ম জানা একজন সচেতন ব্যক্তির অন্যতম গুণ।
তবে দুঃখের বা আফসোসের বিষয় হলো বর্তমানের এই আধুনিক যুগের অনেকে জানেই না যে কীভাবে সঠিক ও সুন্দর ভাবে পত্র বা চিঠি লিখতে হয়। আর তাই আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি সুন্দর করে চিঠি লেখতে পারবেন বা চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। কারন
এই আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন:
- চিঠি কী
- চিঠির প্রকারভেদ
- চিঠি লেখার কাঠামো
- Formal ও Informal Letter এর পার্থক্য
- চিঠি লেখার সময় খেয়াল রাখার বিষয়
- বাস্তব উদাহরণসহ বিভিন্ন চিঠির নমুনা
চিঠি কী
চিঠি হলো একটি লিখিত বার্তা বা যোগাযোগের একটি প্রাচীন ও ব্যক্তিগত মাধ্যম, যেখানে একজন ব্যাক্তি কাগজে হাতে লিখে অন্য একটি ব্যাক্তিকে তথ্য, অনুভূতি বা চিন্তাভাবনা জানান। এটি সাধারণত খামে ভরে ডাকযোগে বা হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
চিঠির প্রকারভেদ
চিঠি সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত:
১। আনুষ্ঠানিক বা Formal Letter
যেমন:
- চাকরির আবেদন
- সরকারি দপ্তরে আবেদন
- প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ
২। অনানুষ্ঠানিক বা Informal Letter
যেমন:
- বন্ধু বা আত্মীয়কে চিঠি লেখা
- শুভেচ্ছা চিঠি লেখা
- ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি প্রকাশ
- কাউকে আমন্ত্রন জানানো
চিঠি লেখার নিয়ম বা কাঠাম
চিঠি লেখার কাঠামো খুব সহজভাবে বোঝার জন্য আমরা দুটি ভাগে আলোচনা করতে পারি –
- ব্যক্তিগত চিঠি বা Informal Letter
- আনুষ্ঠানিক চিঠি বা Formal Letter
ব্যক্তিগত বা Informal চিঠি সাধারণত বন্ধু বা পরিবারকে লেখা হয়, যেখানে ভাষা খুব সহজ ও আন্তরিক হয়। এ ধরনের চিঠিতে প্রথমে তারিখ, তারপর প্রিয় বলে সম্বোধন (যেমন ‘প্রিয় মামা’ বা ‘আদরের বন্ধু’) লিখে মূল কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে লিখতে হয়। শেষ করতে হয় স্নেহ বা ভালোবাসার শব্দ দিয়ে, যেমন ‘তোমার স্নেহের’ বা ‘ভালোবাসার’ লিখে নিজের নাম যোগ করতে হয়।
আনুষ্ঠানিক বা Formal চিঠি লেখার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। প্রথমে নিজের ঠিকানা ও তারিখ লিখতে হয়, তারপর যাকে চিঠি লিখছেন তার পদবি ও ঠিকানা লিখতে হয়। এরপর ‘বিষয়’ শিরোনামে সংক্ষেপে চিঠির উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হয়। চিঠির মূল অংশে খুব স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষায় উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে হয়, অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে যেতে হয়। শেষে ‘বিনীত নিবেদক’ বা ‘ধন্যবাদান্তে’ লিখে নিজের নাম, পদবী ও যোগাযোগের তথ্য দিতে হয়। আনুষ্ঠানিক চিঠিতে ভদ্রতা ও সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা খুব জরুরি।
বি.দ্রঃ আমি জানি কথা গুলো বুঝতে আপনাদের অনেকের সমস্যা হবে। তাই আপনাদের জন্য নিচে কিছু উদাহরন দেওয়া থাকবে ,যেগুলো ভালোভাবে খেয়াল করলে আপনি সহজেই চিঠি লেখার নিয়ম বা মূল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

Formal ও Informal Letter এর পার্থক্য
বিষয় | Formal Letter | Informal Letter |
ভাষা | শুদ্ধ ও প্রফেশনাল | আবেগপূর্ণ ও ঘরোয়া |
গঠন | নির্দিষ্ট কাঠামো | কিছুটা মুক্ত |
উদ্দেশ্য | পেশাগত বা প্রশাসনিক | ব্যক্তিগত |
সম্বোধন | “জনাব”, “স্যার” বলে | “প্রিয় বন্ধু”, “আদরের মা” বলে |
স্বাক্ষর | পূর্ণ নাম ও পদবি লিখতে হবে | শুধু নাম লিখতে হবে |
চিঠি লেখার সময় খেয়াল রাখার বিষয়
চিঠি লেখার সময় নিচে দেওয়া বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
- বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা: বার্তাটি যেন নির্দিষ্ট ও সংক্ষিপ্ত হয়।
- ভাষার শুদ্ধতা: বানান ও ব্যাকরণগত ভুল পরিহার করতে হবে।
- সৌজন্যতা বজায় রাখা: কঠিন কথাও শালীনভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
- চিঠির দৈর্ঘ্য: খুব বেশি বড় বা অপ্রয়োজনীয় না হওয়া ভালো।
- সঠিক প্রাপক চিহ্নিতকরণ: যাতে বার্তা সঠিক জায়গায় পৌঁছায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিঠির নমুনা বা উদাহরন
Formal Letter বা আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার নিয়মঃ
মোহাম্মদ রাসেল হোসেন
৫৩০, জৈনতপুন, বারুয়াখালী, নবাবগঞ্জ
ঢাকা-১৩২২
তারিখ: …..প্রধান শিক্ষক
বারুয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়
বারুয়াখালী, নবাবগঞ্জ, ঢাকা-১৩২২বিষয়: গনিত শিক্ষক পদে চাকরির আবেদন
জনাব,
প্রথমেই আমার সালাম নিবেন। আপনার বিদ্যালয়ের গনিত শিক্ষক পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি এই আবেদন করছি।(এভাবে আপনার সম্পর্কে যা যা লেখা প্রয়োজন তা লিখবেন)
আপনার সদয় বিবেচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। সাক্ষাৎকারের সুযোগ পেলে কৃতজ্ঞ থাকব।
ইতি,
বিনীত,
মোহাম্মদ রাসেল হোসেন
মোবাইল: ০১৭XXXXXXXX
ইমেইল: contact@bistaritojanun.com
InFormal Letter বা ব্যাক্তিগত চিঠি লেখার নিয়মঃ
বাসা-৫, রোড-৮, ব্লক-সি
মিরপুর, ঢাকা-১২১৬
২৭ জুন ২০২৫প্রিয় বন্ধু হাসান,
শুভেচ্ছা নিও। আশা করি তুমি ভালো আছো। আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি।(এভাবে আপনি আপনার মূল কথাগুলো লিখুন)
আমাদের বাড়িতে সবাই ভালো আছে। মা-বাবা তোমার খোঁজ নিয়েছেন। যদি সম্ভব হয়, আগামী ছুটিতে আমাদের বাসায় এসো। অনেক গল্প জমে আছে। তোমার সাথেও কথা বলতে মন চায়।
এখানেই আজ শেষ করছি। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকব।
ইতি,
তোমার বন্ধু,
রাকিব
উক্ত উদাহরগুলো মধ্য থেকে শুধু চিঠি লেখার ফরমেট গুলো খেয়াল করুন।
আরো পরুনঃ
উপসংহার
চিঠি লেখা এক প্রাচীন শিল্প। এটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং একজন ব্যক্তির ভাষাজ্ঞান, শিষ্টাচার ও মননশীলতার প্রতিফলন। চিঠি লেখার নিয়ম জানা থাকলে যেকোনো প্রয়োজনে কার্যকরীভাবে যোগাযোগ করা যায়।
ব্যক্তিগত হোক বা প্রাতিষ্ঠানিক, সঠিক ফরম্যাট ও ভাষা ব্যবহার করে সুন্দরভাবে চিঠি লিখুন।
চিঠি শুধু তথ্য বিনিময় নয়, এটি সম্পর্কের সেতুবন্ধন।