তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই নামাজে মুসলিমরা দীর্ঘ সময় ধরে কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন। তারাবিহ নামাজের বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতগুলো অনেকের কাছেই অজানা। এই আর্টিকেলে আমরা “তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে ও বাংলায় উচ্চারণ সহ” শিখবো এবং এর ফজিলত ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।
তারাবিহ নামাজ কি?
তারাবিহ নামাজ হল রমজান মাসের রাতে পড়া একটি সুন্নত নামাজ। এটি সাধারণত ইশার নামাজের পরে পড়া হয় এবং ২০ রাকাত নিয়ে গঠিত। এই নামাজে ইমাম সাহেব কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং মুসল্লিরা তা মনোযোগ সহকারে শোনেন। তারাবিহ নামাজের শেষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়, যা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাতের গুরুত্ব
তারাবিহ নামাজের দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহ মাফ চায়, রহমত প্রার্থনা করে এবং জান্নাতের আশা করে। এই দোয়াগুলো আরবিতে উচ্চারণ করা সুন্নত, তবে বাংলায় উচ্চারণ করেও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যায়। দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
তারাবির নামাজের দোয়া: আরবিতে ও বাংলায় উচ্চারণ সহ
তারাবিহ নামাজের শেষে পড়া দোয়া ও মোনাজাতগুলো নিচে আরবিতে ও বাংলায় উচ্চারণ সহ দেওয়া হলো:
১. দোয়া কুনুত (তারাবিহ নামাজের বিশেষ দোয়া)
এই দোয়া তারাবিহ নামাজের শেষ রাকাতে পড়া হয়। এটি আরবিতে পড়া সুন্নত, তবে বাংলায় উচ্চারণ করেও পড়া যায়।
আরবিতে:
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
বাংলায় উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাহদিনি ফিমান হাদাইত, ওয়া আফিনি ফিমান আফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানি ফিমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বারিক লি ফিমা আ’তাইত, ওয়া ক্বিনি শার্রা মা ক্বাদাইত, ইন্নাকা তাক্বদি ওয়া লা ইউক্বদা আলাইক, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াজিলু মান ওয়ালাইত, ওয়া লা ইয়া’ইজ্জু মান আদাইত, তাবারাকতা রব্বানা ওয়া তা’আলাইত।
অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সৎপথে পরিচালিত করো তাদের সাথে যাদেরকে তুমি হিদায়াত দান করেছ। আমাকে নিরাপত্তা দান করো তাদের সাথে যাদেরকে তুমি নিরাপত্তা দান করেছ। আমার অভিভাবক হও তাদের সাথে যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছ। আমার জন্য বরকত দান করো তুমি যা দান করেছ। আমাকে রক্ষা করো সেই অনিষ্ট থেকে যা তুমি নির্ধারণ করেছ। নিশ্চয় তুমি ফয়সালা করো এবং তোমার বিরুদ্ধে ফয়সালা করা হয় না। নিশ্চয়ই তুমি লাঞ্ছিত করো না তাদেরকে যাদেরকে তুমি সাহায্য করো। আর তুমি সম্মানিত করো না তাদেরকে যাদের সাথে তুমি শত্রুতা করো। হে আমাদের রব! তুমি বরকতময় এবং সর্বোচ্চ।
২. ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া
তারাবিহ নামাজের পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরবিতে:
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْمَ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
বাংলায় উচ্চারণ:
আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ:
আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর কাছে, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক। আর আমি তাঁর দিকেই তওবা করছি।
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাতের ফজিলত
- গুনাহ মাফ হয়: তারাবিহ নামাজের দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন।
- রহমত লাভ: এই দোয়াগুলো পড়লে আল্লাহর রহমত নাজিল হয়।
- আত্মিক প্রশান্তি: দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।
- জান্নাতের সুসংবাদ: তারাবিহ নামাজের দোয়া ও মোনাজাত জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম।
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত পড়ার নিয়ম
- নামাজ শেষে ইমাম সাহেব দোয়া কুনুত পড়বেন এবং মুসল্লিরা আমিন বলবেন।
- দোয়া কুনুত পড়ার সময় হাত উঠিয়ে দোয়া করা সুন্নত।
- দোয়া শেষে সাধারণ মোনাজাত করা যেতে পারে।
- দোয়া ও মোনাজাতের সময় মনোযোগ সহকারে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত।
আরো পরুনঃ
- পবিত্র ঈদুল ফিতর শুভেচ্ছা বার্তা
- ৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায়
- মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং – আধুনিক যুগে আপনার ক্যারিয়ার তৈরি করুন
- তারাবির নামাজের নিয়ম
উপসংহার
তারাবিহ নামাজের দোয়া ও মোনাজাত রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এই দোয়াগুলো আরবিতে ও বাংলায় উচ্চারণ সহ শিখলে নামাজের পর তা সহজেই পড়া যায়। আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত ও জান্নাত প্রার্থনার জন্য এই দোয়া ও মোনাজাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাকে “তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে ও বাংলায় উচ্চারণ সহ” শিখতে সাহায্য করবে।