দোয়া হলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মহান ইবাদত। প্রতিটি মুসলমানের জীবনে দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু বিশেষ আমল ও সময় রয়েছে, যা জানা এবং মেনে চলা প্রত্যেকের জন্য জরুরি। এই লেখায় আমরা দোয়া কবুলের আমল ও সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
দোয়া কবুলের সময়
দোয়া কবুলের কিছু বিশেষ সময় থাকে। যে সময় নবী-রাসুলরা দোয়া করতেন। নিচে দোয়া কবুলের সময় গুলোর আংশিক দেওয়া হলোঃ
রাতের শেষ তৃতীয়াংশ
রাতের শেষ তৃতীয়াংশ হলো দোয়া কবুলের একটি বিশেষ সময়। এই সময়ে আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন এবং বান্দার ডাকে সাড়া দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, ‘কে আছো আমার কাছে প্রার্থনা করার, আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করব। কে আছো আমার কাছে কিছু চাওয়ার, আমি তোমাকে তা দেব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি তোমাকে ক্ষমা করব। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়
আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়েও দোয়া কবুল হয়। এই সময়ে দোয়া করা খুবই ফজিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।” (সুনান আবু দাউদ)
জুমার দিনের আসরের পরের সময়
জুমার দিনের আসরের পরের সময়টিও দোয়া কবুলের একটি বিশেষ মুহূর্ত। এই সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
বৃষ্টি পড়ার সময়
বৃষ্টি পড়ার সময় দোয়া কবুল হয়। এই সময়ে আল্লাহর রহমত নাজিল হয়, তাই এই সময়ে দোয়া করা খুবই ফজিলতপূর্ণ।
সিজদার সময়
সিজদার সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। এই সময়ে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“বান্দা সিজদায় থাকাকালীন আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তাই তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দোয়া কর।” (সহিহ মুসলিম)
দোয়া কবুলের আমল
১. ইখলাস বা একনিষ্ঠতা:
দোয়া কবুলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। দোয়া করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কোনো রিয়া বা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ছাড়া।
২. হালাল রুজি:
হালাল রুজি বা হালাল উপার্জন দোয়া কবুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হারাম উপার্জন দোয়া কবুলে বাধা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকে, তার চুল এলোমেলো, শরীর ধুলোবালি মাখামাখি। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, ‘হে প্রভু! হে প্রভু!’ অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং তার শরীর হারাম দ্বারা পুষ্ট। তাহলে কিভাবে তার দোয়া কবুল হবে?” (সহিহ মুসলিম)
৩. দোয়ার আগে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পাঠ:
দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপর দরুদ পাঠ করা উচিত। এই আমল দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
৪. দোয়ায় ধৈর্য ধরা:
দোয়া করার পর ধৈর্য ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দোয়া করতে হবে এবং তাঁর সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে কারো দোয়া তখনই কবুল হয়, যখন সে তাড়াহুড়ো না করে এবং বলে না যে, ‘আমি দোয়া করেছি, কিন্তু আমার দোয়া কবুল হয়নি।’ (সহিহ বুখারি)
৫. গুনাহ থেকে তাওবা করা:
গুনাহ দোয়া কবুলে বাধা সৃষ্টি করে। তাই দোয়া কবুলের জন্য গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি।
দোয়া কবুলের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
১. দোয়া কবুলের দোয়া:
“ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আলা দীনিকা”
(হে হৃদয় পরিবর্তনকারী, আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখো।)
২. দোয়া কবুলের জন্য দোয়া:
“রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান নার”
(হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।)
আরো পরুনঃ
উপসংহার
দোয়া হলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। দোয়া কবুলের জন্য বিশেষ সময় ও আমল সম্পর্কে জানা এবং তা মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, ইখলাসের সাথে দোয়া করলে ইনশাআল্লাহ তা কবুল হবে। দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের জন্য আবেদন করতে পারি এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।