অতিরিক্ত ঘুম বা হাইপারসোমনিয়া অনেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এটি শুধু কর্মদক্ষতাই কমায় না, বরং মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সম্পর্ক ও শারীরিক সুস্থতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আপনি যদি প্রায়ই অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েন বা দিনের বেলা অতিরিক্ত তন্দ্রাভাব অনুভব করেন, তবে এই গাইড আপনাকে অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় শিখিয়ে দেবে।
এই আর্টিকেলে আমরা ঘুমের প্রাকৃতিক চক্র, অতিরিক্ত ঘুমের কারণ এবং এটি নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী কৌশল নিয়ে আলোচনা করব।
অতিরিক্ত ঘুম কী এবং কেন হয়?
অতিরিক্ত ঘুম বলতে সাধারণত ৯-১০ ঘন্টার বেশি সময় ধরে ঘুমানো বা দিনের বেলা বারবার তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবকে বোঝায়। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
- অপর্যাপ্ত রাতের ঘুম – রাতে ঘুম কম হলে শরীর তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
- ঘুমের ব্যাধি – স্লিপ অ্যাপনিয়া, নারকোলেপসি বা রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমের মতো সমস্যা।
- মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন – উদ্বেগ ও হতাশা ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস – প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ও চিনি ঘুমের ভারসাম্য নষ্ট করে।
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা – এক্সারসাইজের অভাব শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়
একটি সুস্থ ঘুমের রুটিন তৈরি করুন
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন (সপ্তাহান্তেও)।
- রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- দুপুরের ঘুম ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
সকালে সূর্যালোকে কিছু সময় কাটান
- প্রাকৃতিক আলো মেলাটোনিন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে, যা আপনাকে সতেজ রাখে। সকালে ১৫-২০ মিনিট হাঁটুন বা জানালার পাশে বসে থাকুন।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সীমিত করুন
- দিনের দ্বিতীয়ার্ধে কফি বা চা এড়িয়ে চলুন।
- অ্যালকোহল ঘুমের গুণগত মান কমিয়ে দেয়।
হাইড্রেটেড থাকুন
- ডিহাইড্রেশন ক্লান্তির কারণ। দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট হাঁটা, যোগব্যায়াম বা কার্ডিও করুন।
- ভারী ওয়ার্কআউট সন্ধ্যার আগেই শেষ করুন।
মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
- স্ট্রেস কমাতে দিনে ১০ মিনিট মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।
ঘুমের পরিবেশ উন্নত করুন
- শোবার ঘর অন্ধকার, শীতল ও শান্ত রাখুন।
- বালিশ ও ম্যাট্রেস আরামদায়ক হলে ভালো ঘুম হয়।
স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনুন
- ঘুমানোর ১ ঘন্টা আগে ফোন, টিভি বা ল্যাপটপ ব্যবহার বন্ধ করুন।
স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলুন
- প্রোটিন, ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খান।
- রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন
- যদি নিজের চেষ্টায় উন্নতি না হয়, তবে একজন স্লিপ স্পেশালিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
দিনের বেলা ঘুম কমানোর উপায়
অফিসে, ক্লাসে বা বাড়িতে কাজ করার সময় হঠাৎ তন্দ্রাভাব চলে আসা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এই তন্দ্রা শুধু কাজের গতিই কমায় না, বরং সৃজনশীলতা ও মনোযোগেও ব্যাঘাত ঘটায়। আর তাই অনেকে দিনের বেলা ঘুম কমানোর উপায় জানতে চায়। আপনিও যদি প্রায়ই দুপুরে বা সন্ধ্যায় ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন, তবে এই গাইডটি পড়ে দিনের বেলা ঘুম কমানোর উপায় শিখে নিন।

দিনের বেলা ঘুম আসার প্রধান কারণ
- রাতে অপর্যাপ্ত বা অস্বাস্থ্যকর ঘুম
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (ভারী খাবার, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট)
- ডিহাইড্রেশন বা পর্যাপ্ত পানি পান না করা
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও এক্সারসাইজের অভাব
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
- ক্যাফেইনের অতিরিক্ত ব্যবহার বা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া
দিনের বেলা ঘুম কমানোর কার্যকরী উপায়
দিনের বেলা ঘুম কমানোর উপায় গুলো দেওয়া হলোঃ
পর্যাপ্ত রাতের ঘুম নিশ্চিত করুন
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা গভীর ঘুমের চেষ্টা করুন।
- শোবার আগে মোবাইল স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন (ব্লু লাইট মেলাটোনিন নষ্ট করে)।
সকালে হালকা সূর্যালোকে সময় কাটান
- প্রাকৃতিক আলো সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক রাখে এবং দিনের বেলা তন্দ্রা কমায়।
সকালের নাস্তায় প্রোটিন ও ফাইবার রাখুন
- ডিম, ওটমিল, বাদাম, ফল ইত্যাদি খান।
- মিষ্টি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন (ব্লাড সুগার স্পাইক করে ক্লান্তি বাড়ায়)।
হাইড্রেটেড থাকুন
- দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- ক্লান্তি লাগলে এক গ্লাস পানি + লেবুর রস পান করুন।
ছোট ছোট ব্রেক নিন ও হাঁটুন
- প্রতি ১ ঘন্টা কাজের পর ৫ মিনিট হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন।
- গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Deep Breathing) করুন।
ক্যাফেইন স্মার্টলি ব্যবহার করুন
- দিনে ২ কাপের বেশি কফি/চা নয়।
- দুপুর ২টার পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন (রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়)।
ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন বা মুখ ধুয়ে নিন
- ক্লান্তি লাগলে চোখ ও মুখে হালকা ঠান্ডা পানির ছিটা দিন।
শক্তিশালী সুগন্ধি ব্যবহার করুন
- পেপারমিন্ট, লেবু বা রোজমেরি অ্যারোমা সতেজতা বাড়ায়।
শর্ট পাওয়ার ন্যাপ নিন (যদি একান্তই প্রয়োজন হয়)
- ১০-২০ মিনিটের বেশি নয়, নাহলে গভীর ঘুম চলে আসবে।
- দুপুর ২-৩টার আগে ন্যাপ নেওয়ার চেষ্টা করুন।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করুন
- মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা গান শুনুন।
- কাজের মধ্যে প্রিয় বিষয়ে ৫ মিনিট ব্রেক নিন (মোটিভেশন বাড়ায়)।
পড়ার সময় ঘুম কমানোর উপায়
রাত জেগে পড়তে গিয়ে ঘুম চলে আসা বা দিনের বেলা বই খুললেই চোখ ঢুলে পড়া—এ সমস্যা প্রায় সবারই হয়। পরীক্ষার সময় বা গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই পোস্টে পড়ার সময় ঘুম কমানোর উপায় বা কিছু সহজ কৌশল দেওয়া হয়েছে যা মেনে চললে পড়ার সময় ঘুম কমানো সম্ভব।

পড়ার সময় ঘুম আসার কারণ
- অপর্যাপ্ত রাতের ঘুম
- মনোটোনাস পড়ার পদ্ধতি (একঘেয়ে ভাবে পড়া)
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (ভারী খাবার, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট)
- পড়ার পরিবেশ অস্বস্তিকর (অতিরিক্ত গরম বা আলো কম)
- ডিহাইড্রেশন (পানি শূন্যতা)
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা (একটানা বসে পড়া)
পড়ার সময় ঘুম কমানোর কার্যকরী উপায়
পড়ার সময় ঘুম কমানোর উপায় গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
সঠিক পড়ার সময় বেছে নিন
- আপনার সবচেয়ে সতেজ সময় (সকাল বা সন্ধ্যা) পড়ার জন্য বেছে নিন।
- রাত ১টার পর পড়া এড়িয়ে চলুন (প্রাকৃতিক ঘুম চক্র নষ্ট হয়)।
সক্রিয় পড়ার পদ্ধতি অনুসরণ করুন
- জোরে জোরে পড়ুন, নোট তৈরি করুন বা গুরুত্বপূর্ণ লাইন আন্ডারলাইন করুন।
- প্রশ্ন তৈরি করে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন (মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে)।
পড়ার জায়গা ঠিক করুন
- পর্যাপ্ত আলো আছে এমন জায়গায় পড়ুন (অন্ধকার ঘরে পড়লে ঘুম পায়)।
- সোজা হয়ে বসুন, খুব আরামদায়ক সোফা বা বিছানায় পড়বেন না।
ছোট ছোট বিরতি নিন
- প্রতি ৪৫-৫০ মিনিট পড়ার পর ৫-১০ মিনিট হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন।
- বিরতিতে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিন (চোখের ক্লান্তি কমবে)।
হাইড্রেটেড থাকুন
- পড়ার টেবিলে পানি বা লেবু-পানি রাখুন।
- কফি/চা পরিমিত পান করুন (দিনে ২ কাপের বেশি নয়)।
হালকা স্ন্যাকস খান
- বাদাম, ফল বা ডার্ক চকলেট খান (শর্করা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন)।
- ভারী খাবার (ভাত, রুটি) পড়ার আগে খাবেন না।
শক্তিশালী সুগন্ধি ব্যবহার করুন
- পেপারমিন্ট, লেবু বা ইউক্যালিপটাস এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন (সতেজতা বাড়ায়)।
চুইংগাম চিবোতে পারেন
- চুইংগাম চিবোনো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায় ও ঘুম তাড়ায়।
ঠান্ডা পানির ব্যবহার
- মুখ ধুয়ে নিন বা হাত-পায়ে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন।
গ্রুপ স্টাডি করুন
- বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে পড়ুন, একা পড়ার চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকবেন।
দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ ঘুমের জন্য টিপস
- একটি স্লিপ ডায়েরি রাখুন এবং প্রতিদিনের ঘুমের সময় ও মান লিখে রাখুন।
- অ্যারোমাথেরাপি (ল্যাভেন্ডার, ক্যামোমাইল) ব্যবহার করে রিলাক্স করুন।
- গ্রিন টি বা হার্বাল টি পান করুন যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
আরো পরুনঃ
উপসংহার
দিনের বেলা বা পড়ার সময় অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই একটি সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে হবে। উপরে উল্লিখিত অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে ধীরে ধীরে আপনার ঘুমের চক্র স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মনে রাখবেন, পর্যাপ্ত ঘুম যেমন জরুরি, তেমনি অতিরিক্ত ঘুমও ক্ষতিকর।
সুস্থ থাকুন, সক্রিয় থাকুন!