আয়াতুল কুরসি হলো সুরা আল-বাকারাহ এর ২৫৫ তম আয়াত। এই আয়াতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত। এবং এটি ইসলামের মধ্যে একটি বিশেষ মর্যাদা ও তাৎপর্যপূর্ণ আয়াত হিসেবে পরিচিত। এই আয়াতটির মাধ্যমে আল্লাহর শক্তি, জ্ঞান, এবং কর্তৃত্বের অসীমতা এবং তাঁর পরিপূর্ণ কর্তৃত্বের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা বা আমল করার অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে আমাদের অনেকেরই এই আয়াতুল কুরসিটি জানা নেই। আর তাই আমরা এই পোস্টটিতে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ, অর্থ এবং এর ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করবো। এছাড়া এই আয়াতটি আমল করার পদ্ধতি সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
আয়াতুল কুরসি আমল করার পদ্ধতি
আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এবং এর অসংখ্য ফজিলত ও উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই এটি আমল করার পদ্ধতি জানা নেই। আর তাই নিচে এই আমল করার সঠিক পদ্ধতি দেওয়া হলো:
১। ফরজ নামাজের পরে পড়া: প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি একবার পড়া সুন্নত।
২। রাতে ঘুমানোর আগে: ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি একবার বা তিনবার পাঠ করুন।
৩। ভয় বা বিপদে পড়লে: যেকোনো ভয়, বিপদ বা কঠিন পরিস্থিতিতে আয়াতুল কুরসি বারবার পড়ুন।
৪। ভ্রমণে নিরাপত্তার জন্য: যাত্রার শুরুতে আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহর সুরক্ষা লাভ হয়।
৫। ঘর, ব্যবসা বা সম্পত্তির জন্য: ঘরের বা ব্যবসার জায়গায় আয়াতুল কুরসি পড়ে দম করুন।
৬। সকালে ও সন্ধ্যায় পড়া: সকালে ও সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি একবার বা তিনবার পড়া গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া বা প্রার্থনার আগে ও পরে আয়াতুল কুরসি পড়লে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী আমল।
আয়াতুল কুরসি আরবি
اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ ۚ لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ ؕ لَهٗ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ ؕ مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ۚ وَلَا يَـُٔوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِىُّ الْعَظِيْمُ
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুওয়ালা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ। মান যাল্লাজি ইয়াশ্ফাউ ইন্দাহু ইল্লা বি ইজনিহি। ইয়াআলামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়া মা খালফাহুম। ওয়া লা ইউহিতুনা বিছাইউম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’আ। ওয়াসি’য়া কুরসিইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফ্জুহুমা। ওয়া হুয়াল আলিয়্যুল আজিম।
আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সৃষ্টির ধারক ও সংরক্ষক। তাঁকে তন্দ্রা স্পর্শ করে না এবং তিনি নিদ্রিতও হন না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তিনি জানেন যা কিছু তাঁদের সামনে রয়েছে এবং যা কিছু তাঁদের পেছনে রয়েছে। আর তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা আয়ত্ত করতে পারে না, তবে তিনি যা ইচ্ছা করেন (তাই আয়ত্ত করতে পারে)। তাঁর কুরসি আসমান ও জমিনকে পরিব্যাপ্ত করেছে এবং এগুলোর সংরক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি মহীয়ান, গৌরবময়।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
প্রতিদিন এই আয়াতটি পাঠ করার অসংখ্য উপকারিতা বা ফজিলত রয়েছে।
নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো:
১। রক্ষা ও নিরাপত্তা: এই আয়াতটি পাঠ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শয়তান ও দুষ্ট আত্মার ক্ষতি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
২। তাকওয়া বৃদ্ধি: এটি পড়লে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাকওয়া বৃদ্ধি পায়।
৩। পরকালীন সাফল্য: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই আয়াতটি পাঠ করলে জান্নাতে প্রবেশের পথ সহজ হয়।
৪। গুনাহ মাফের মাধ্যম: নিয়মিত পাঠ করলে ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভ হয়।
৫। কষ্ট থেকে মুক্তি: বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি পাঠ করা অত্যন্ত উপকারী।
৬। রিজিক বৃদ্ধি: এটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ রিজিকে বরকত দেন।
(তারাবির নামাজের নিয়ম: সঠিক পদ্ধতি জানুন)
আয়াতুল কুরসির মূল বক্তব্য
- আল্লাহ ছাড়া কেউ ইবাদত বা উপাসনা করার যোগ্য নয়।
- আল্লাহর সিংহাসন আকাশ-মহাকাশ এবং পৃথিবীকে আটকে রাখে।
- আল্লাহ কখনও ক্লান্ত হন না বা ঘুমান না।
- আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে আবৃত করে এবং কিছুই আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়।