স্বাস্থ্য শিক্ষা চাকরি প্রযুক্তি ধর্ম বাজার দর ছেলেদের নাম মেয়েদের নাম ছেলেদের নামের অর্থ মেয়েদের নামের অর্থ অন্যান্য

তারাবির নামাজের নিয়ম: সঠিক পদ্ধতি জানুন 2025

Published on: December 5, 2024
তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবির নামাজের নিয়ম মেনে নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ইসলামের একটি বিশেষ সুন্নত ইবাদত। নিয়ম মেনে নামাজ পড়লে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন এবং রাসুল (সা.) এর সুন্নত পালন করতে সক্ষম হবেন।

এই নামাজে দীর্ঘ আয়াত পড়া হয়, যা মুসলিমদের আত্মশুদ্ধি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে। তারাবির নামাজের নিয়ম অনুযায়ী নামাজ পড়লে, একে অপরের সঙ্গে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমাজে শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর নিকট নিয়মিত ও সঠিকভাবে নামাজ আদায় করলে গুনাহ মাফ হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়, যা রমজান মাসের বিশেষ বরকত। এর মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের আত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারে এবং পরকালীন সাফল্যের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যায়। তাই তারাবির নামাজের নিয়ম মেনে নামাজ পড়া সকল মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তারাবির নামাজের গুরুত্ব

তারাবি নামাজ রমজান মাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষ ফজিলত ও পুরস্কারের উৎস। এটি রাসুল (সা.) এর সুন্নত হিসেবে রমজান মাসে রাতে আদায় করা হয় এবং এটি মুসলিমদের আল্লাহর নিকট নৈকট্য অর্জন করতে সহায়তা করে। তারাবি নামাজে দীর্ঘ আয়াত পড়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন আত্মশুদ্ধি ঘটে, তেমনি অন্যদিকে তা মুসলিমদের মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক উপকারে আসে।

রমজান মাসে এই নামাজ আদায় করার মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর রহমত লাভ করে এবং পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করার সুযোগ পায়। তারাবি নামাজ শুধু ব্যক্তিগত উপকারেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি মুসলিম সমাজের মধ্যে ঐক্য এবং একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে, বিশেষত জামাতে একসঙ্গে নামাজ পড়ার সময়। এজন্য তারাবি নামাজের গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত বিশাল, যা মুসলিমদের জীবনে আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের এক বিশাল মাধ্যম।

তারাবি নামাজ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস

রাসুল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও ইখলাসের সাথে তারাবি নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
(সাহীহ বুখারি ও মুসলিম)

রাসুল (সা.) বলেন:
“রমজান মাসে রাতে তারাবি নামাজ পড়া মুমিনের জন্য একটি বড় উপহার।”
(আত-তাবারানি)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
“রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি তারাবি নামাজে নেতৃত্ব দেবে, তার নামাজ তার সকল মুসলিম ভাইদের জন্য পূর্ণ হবে।'”
(আবু দাউদ)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত:
“রাসুল (সা.) তারাবি নামাজ মসজিদে সাহাবিদের সঙ্গে জামাতে পড়তেন। একদিন তিনি নামাজ পড়তে বের হন, কিন্তু পরের দিন অন্য কারণে বের হননি। পরদিন সাহাবিরা তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আজ আমাদের সঙ্গে নামাজ পড়েননি।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি জানতাম যে, যদি আমি এটি নিয়মিত করে দেই, তোমরা হয়তো একে ফরজ মনে করতে শুরু করবে।'”
(সহীহ বুখারি)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
“রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তারাবি নামাজ পড়বে, সে তার রমজান মাসের সমস্ত দিনে তাকওয়া অর্জন করবে।'”
(আত-তাবারানি)

তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবি নামাজ রমজান মাসে রাতের অতিরিক্ত নামাজ, যা সুন্নতে মোয়াক্কাদা (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত) হিসেবে আদায় করা হয়। এটি সাধারণত ইমামসহ জামাতে পড়া হয়, তবে এককভাবে  বা পরিবারে সবাই মিলে একত্রে বাড়িতেও পড়া যায়। তারাবি নামাজ আদায়ের নিয়ম কিছুটা বিশেষ, এবং এখানে তার বিস্তারিত নিয়মাবলি তুলে ধরা হলো:

১। নিয়তঃ তারাবি নামাজের জন্য পূর্বে নফল নামাজের মতো নিয়ত করতে হবে। যেমন নিয়ত করা হয়, “আমি আল্লাহর জন্য তারাবি নামাজ আদায় করছি।”

২। রাকআত সংখ্যা: তারাবি নামাজ মোট ২০ রাকআত পড়া সুন্নত। তবে কিছু মাযহাবের মধ্যে ৮ রাকআত পড়াও গ্রহণযোগ্য। সাধারণত ২০ রাকআতই অধিক প্রচলিত।

৩। প্রতিটি রাকআত: প্রতিটি রাকআতে সূরা ফাতিহা এবং এর পরে অন্য যে কোনো একটি সূরা পড়া হয়। সাধারণত সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফিল, বা ছোট সূরা পড়া হয়, তবে বড় সূরাও পড়া যেতে পারে।

৪। আয়াতের পাঠ: তারাবি নামাজে সাধারণত দীর্ঘ আয়াত পড়া হয়। এক রাকআতে কিছু আয়াত পড়লে তা অন্যান্য রাকআতের তুলনায় দীর্ঘ হয়, কারণ এতে সময় বেশি লাগে।

৫। তাশাহুদ ও সালাম: প্রতি দুটি রাকআতের পর বসে তাশাহুদ পাঠ করা হয়। শেষে সালাম ফিরিয়ে নামাজ সমাপ্ত করা হয়। তবে জামাতে পড়লে, ইমাম সালাম পর সবাই একযোগে সালাম ফেরায়।

৬। জামাতে তারাবি নামাজ: তারাবি নামাজ জামাতে আদায় করা উত্তম। এতে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে নামাজ পড়ার মাধ্যমে ঐক্য বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর কাছে বেশি পুরস্কার আশা করা যায়।

৭। ইমাম ও মুত্তালি: যদি ইমাম তারাবি নামাজের জন্য একা বা জামাতে নামাজ আদায় করেন, তাহলে ইমাম স্বাভাবিকভাবে নামাজে নেতৃত্ব দেন এবং মুত্তালি (পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া) অনুসরণ করেন।

৮। মকবুল ও পরিশুদ্ধি: তারাবি নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার পুরনো গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে, যদি সে ঈমান ও সঠিক নিয়ত নিয়ে এটি পড়ে।

৯। বিশ্রাম (তরাবি শব্দের অর্থ বিশ্রাম): ৪ রাকাত পড়ার পর সামান্য বিশ্রাম নেয়া সুন্নত। এ সময়ে তাসবিহ-তাহলিল বা দোয়া করা যেতে পারে।

১০। বিতরের নামাজ: তারাবি শেষ করে তিন রাকাত বিতরের নামাজ আদায় করতে হয়। এটি এশার নামাজের অংশ।

    এইভাবে, তারাবি নামাজ রমজান মাসে আল্লাহর নিকট এক গুরুত্বপূর্ণ দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির সুযোগ হিসেবে মুমিনদের মধ্যে প্রচলিত।

    মহিলাদের তারাবি নামাজের নিয়ম

    মহিলারা ঘরে তারাবি আদায় করতে পারেন।

    জামাতে না পড়লেও আলাদা করে নিয়ম মেনে পড়া উচিত।

    তারাবি পড়ার সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

    তারাবি নামাজ পড়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে সহায়তা করে এবং এর ফজিলত ও উপকারিতা বৃদ্ধি করে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:

    ১। নিয়ত:
    তারাবি নামাজ আদায় করার আগে সঠিক নিয়ত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ শুরুর আগে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিয়ত করতে হবে।  মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়। রোজার নিয়তের মতো মনে মনে নিয়ত করলেও কোনো সমস্যা হবে না।

    ২। পবিত্রতা:
    তারাবি নামাজের আগে অজু থাকা অত্যন্ত জরুরি। অজু ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না, সুতরাং অজু ঠিক রেখে নামাজ পড়তে হবে।

    ৩। রাকআত সংখ্যা:
    তারাবি নামাজ সাধারণত ২০ রাকআত হয়, তবে কিছু মাযহাব অনুযায়ী ৮ রাকআতও পড়া যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, যে পরিমাণ রাকআত পড়া হোক না কেন, সেগুলি সঠিকভাবে শেষ করা উচিত।

    ৪। দীর্ঘ আয়াত পড়া:
    তারাবি নামাজে সাধারণত দীর্ঘ আয়াত পড়া হয়, যার ফলে সময় বেশি লাগে। এজন্য সাহসীভাবে নামাজ পড়তে হবে এবং ভোগান্তি না হওয়া উচিত।

    ৫। ইমামকে অনুসরণ করা:
    তারাবি নামাজে জামাতে নামাজ আদায় করা উত্তম। যদি জামাতে নামাজ পড়া হয়, তাহলে ইমামের সাথে মিল রেখে নামাজ পড়তে হবে এবং নামাজের মধ্যে  কোনো  কথা বলা উচিত নয়। নামাজের মধ্যে কোনো ধরনের ভুল বা মলিনতা এড়াতে ইমামের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

    ৬। সামর্থ্য অনুযায়ী পড়া:
    তারাবি নামাজ পড়তে গিয়ে যদি শরীর বা মানসিক অবস্থা খুব ক্লান্ত বা দুর্বল মনে হয়, তবে সামর্থ্য অনুযায়ী নামাজ পড়া যেতে পারে। এতে আল্লাহর কাছে সঠিক নিয়ত নিয়ে পড়া গুরুত্বপূর্ণ।

    ৭। দরুদ শরীফ ও দোয়া:
    তারাবি নামাজে অনেক সময় রুকু, সিজদা এবং তাশাহুদ শেষে দরুদ শরীফ ও দোয়া পড়া হয়। এই সময় আল্লাহর কাছে ব্যক্তিগত প্রার্থনা করা বিশেষ ফলদায়ী হতে পারে।

    ৮। মনোযোগী হওয়া:
    তারাবি নামাজের সময় মনোযোগ এবং ভাবনাগুলি শুধুমাত্র আল্লাহর দিকে নিবদ্ধ রাখতে হবে। মনোযোগ হারালে বা অন্য চিন্তা আসলে নামাজের ফজিলত কমে যেতে পারে। এবং নামাজ না ও হতে পারে। তবে নামাজ কবুল করার মালিক আল্লাহ।

    ৯। শরীরিক অবস্থা:
    যেহেতু তারাবি নামাজ অনেক রাকআত দীর্ঘ হতে পারে, তাই সঠিক শরীরিক অবস্থায় নামাজ পড়া উচিত। একা একা কিছু রাকআত পড়া যেতে পারে, যদি প্রয়োজন মনে হয়।

    ১০। ইমামের কিরাত মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

    ১১। নিয়মিত তারাবি পড়ার চেষ্টা করুন।

      এই বিষয়গুলো মনে রেখে তারাবি নামাজ আদায় করলে তা অধিক বরকত ও ফজিলতপূর্ণ হবে, এবং আল্লাহর নিকট এক বিশেষ দোয়া ও ক্ষমা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

      উপসংহার

      আমরা আশা করি, আপনি তারাবির নামাজের নিয়ম ও গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। রমজান মাসে এই পবিত্র ইবাদত আদায় করলে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও বরকত লাভ করতে পারবেন। নিয়মিত তারাবি নামাজ পড়ার মাধ্যমে আপনার আত্মিক উন্নতি ঘটবে এবং পরকালীন সাফল্য লাভের সুযোগ পাবেন।

      আপনার মতামত বা প্রশ্ন থাকলে, নিচে মন্তব্য করুন। আরও ইসলামিক বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য আর্টিকেল পড়ুন।

      Sheikh Rasel Hossain

      I am an SEO expert. And I am trying to work successfully in online marketing and digital platforms with experience and expertise in search engine optimization.

      Join WhatsApp

      Join Now

      Join Telegram

      Join Now

      Leave a Comment