রমজান মাস হল ইসলামের একটি পবিত্র মাস। এই মাসে মুসলিমরা ফজরের আজান হতে শুরু করে মাগরিবের আজান পর্যন্ত কিছু না খেয়ে রোজা রাখেন এবং মাগরিবের আজেনের পর খেজুর বা পানি খেইয়ে ইফতার শুরু করেন। রোজা রাখা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আর রোজা পালনের সময় রোজার নিয়ত করা এবং সঠিকভাবে রোজা রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই অনুচ্ছেদে আমরা রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত কিভাবে করতে হয়, রোজার নিয়তের গুরুত্ব এবং রোজার নিয়ত সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে না পরলে কিছুই বুঝতে পারবেন না।
রোজার নিয়ত সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস:
১. “যে ব্যক্তি রাতে (রমজান মাসে) রোজার জন্য নিয়ত করবে না, তার রোজা গ্রহণযোগ্য হবে না।”
— [আবু দাউদ, তিরমিজি]
ব্যাখ্যা: রোজার জন্য নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি রোজা রাখার পূর্বে রাতে নিয়ত করা আবশ্যক। রোজা রাখার সময় সকালে উঠে নফল ও ফরজ নিয়ত করলে রোজা গ্রহণযোগ্য হয়।
২. “নিয়ত হৃদয়ে হয়, মুখে তা উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।”
— [সহীহ মুসলিম]
ব্যাখ্যা: রোজার নিয়ত ভাষায় উচ্চারণের প্রয়োজন নেই, তবে তা অন্তরে থাকতে হবে। রোজা রাখার জন্য নিজের ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে, এবং এটি একটি অন্তঃসত্ত্বা বিষয়। মুখে উচ্চারণের উপর নির্ভরশীল নয়।
৩. “রমজান মাসে প্রত্যেক রাতে রোজার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক, তবে দিনের শুরুর আগে, অর্থাৎ সেহরি খাওয়ার আগে যদি কেউ নিয়ত করে, তবে তার রোজা পূর্ণ হবে।”
— [বুখারি]
ব্যাখ্যা: রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়ার সময় পর্যন্ত অন্তরে নিয়ত থাকা জরুরি। রাতের প্রথম ভাগে নিয়ত করা, তবে সেহরি খাওয়ার সময় অবধি তা শেষ করতে হবে।
৪. “যে ব্যক্তি রোজার জন্য নিয়ত করবে, তার রোজা যদি অসুস্থতা বা অসুবিধা ব্যতীত ভঙ্গ না হয়, তবে সে এই রোজার জন্য সওয়াব পাবে।”
— [সহীহ বুখারি]
ব্যাখ্যা: রোজার নিয়ত ইচ্ছাকৃতভাবে পালন করতে হবে এবং তা অবিচ্ছিন্নভাবে রাখতে হবে। তবে যদি কোনো কঠিন পরিস্থিতি আসে, যেমন অসুস্থতা বা পথচলার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়, তাও সওয়াব থেকে বাদ যায় না।
রোজার নিয়ত কখন ও কিভাবে করতে হয়?
রোজার নিয়ত করার সঠিক নিয়ম হলো—রোজা শুরু হওয়ার পূর্বে, অর্থাৎ ফজরের আজানের আগে এবং সেহেরির পর, সঠিকভাবে মনে মনে রোজা রাখার সংকল্প করতে হবে। আর রোজা রাখার প্রবল ইচ্ছে থাকতে হবে।
নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক নয়, বরং মনে মনে ইচ্ছা প্রকাশ করাই যথেষ্ট। তবে কেউ চাইলে মুখে উচ্চারণও করতে পারেন, যেমন: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করছি”। আর রোজার নিয়ত আরবিতে করা বাধ্যতামূলক নয়।
রোজা পালনের ক্ষেত্রে নিয়ত প্রতিটি রোজার জন্য প্রতিদিন নিয়ত করতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি একটি মাসে পুরো রোজা রাখার নিয়ত করে, তাহলে তা মাসব্যাপী সকল দিনের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। তবে ব্যক্তিগতভাবে নিয়মিত রোজা রাখার সময় প্রতিটি রোজার জন্য প্রতিদিন নিয়ত করাই ভাল।
রোজার আরবি নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
এর অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
রোজার নিয়ত বাংলা :
“আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রমজান মাসের আগামী দিনের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করছি।”
সর্বশেষ কথা:
বস্তুত মনের ইচ্ছাই হলো- নিয়ত। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫)। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সাহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আর একটা কথা রোজার নিয়ত পড়ার চেয়ে রোজা রাখার নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
এই পস্টে এ যদি কোন ভুল থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আর যদি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলেও কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আর পোস্টটি যদি আপনার কোনো উপকারে আসে , তাহলে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে আপনাদের বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ…।